ঘেরাটোপ

  • 26 April, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 311 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠিক কিই বা হতে চেয়েছিল সুবর্ণ? আজ তার কেরিয়র যেখানে দাঁড়িয়ে, সুবর্ণকে কি নিজের সেই জীবনের কারণে, নিজের ভিতর থেকে সন্তুষ্ট বলা যেতে পারে? নাকি, নিজেকেই আরও বেশি করে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রায়-অবদমিত, প্রায়-সুপ্ত, প্রায়-বেয়াড়া ইচ্ছেটাই, বারংবার তার সংশয়গ্রস্ত মস্তিষ্কে উঠে আসতে চায়? আদতে সুবর্ণ কি আরও একটু স্বাধীন হতে পারত? পেশাগত জীবনে? আদতে সকলেরই বোধহয় চারপাশে কেবল বিবিধ আয়তনের একেকটি বেলজার বসানো … (শুরু হল ধারাবাহিক রচনা, পর্ব ১)

[১]

 

‘বাড়িয়ে দাও, তোমার হাত – আমি আবার তোমার আঙুল ধরতে চাই, বাড়িয়ে দাও – তোমার হাত, তোমার হাত …” সুর বাজছিল তখন।

 

৪১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কাচের জানালার এপারে বসলে বোঝার উপায় নেই। সুবর্ণ বকুলকে দেখছিল। যদিও সুবর্ণের মায়ের নাম মোটেও সত্যবতী নয়। এতখানি কল্পনার স্বাধীনতা লেখকের জোটে না। লেখকেরা কেবল ফ্রেমের হিসেব তুলে আনতে চান। যদিও সুবর্ণেরই মেয়ে বকুল। সুবর্ণের মা দামিনী আশাপূর্ণা দেবীর লেখা পড়েই মেয়ের নাম সুবর্ণ রেখেছিলেন কিনা, তার কোনও সদুত্তর নেই। বরং পুরুষালি, গাছপাকা নাম হিসেবেই সুবর্ণ নামটিকে তাঁর পছন্দ হয়েছিল বোধহয়। এছাড়াও মনে রাখা উচিত – দামিনী কিন্তু মেয়ের নাম কেবল ‘সুবর্ণ’ই রেখেছিলেন, ‘লতা’ জুড়ে সেই নামকে তিনি আর দীর্ঘায়িত করেননি। আদতে দামিনী সম্পূর্ণ হতে চেয়েছিলেন। ই-কার, আ-কারে যে লিঙ্গভেদ, তিনি তার উপরে উঠতে চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সেই চেষ্টা কতদূর সফলতা পাবে, তার উত্তর বলবে ভবিষ্যৎ।

 

আপাতত সুবর্ণ-বকুল একই উবেরের যাত্রী। বকুলকে তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে সুবর্ণের অফিস যাওয়ার পরিকল্পনা। বকুল ফোন ঘাঁটছে না। সে বই পড়ছে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস। উত্তর-পঞ্চান্নের সিগনাল পেরিয়ে যায়। ছোট্ট কালভার্টের মতো সেতুখানি পেরিয়ে তারা এখন পরমা-আইল্যাণ্ডের অভিমুখে নেমে চলেছে। সুবর্ণ বাইরের দিকে তাকাল। ফ্রেমটা যেন ঝট করেই চোখের সামনে ভেসে উঠল তার। চকিতে পকেট থেকে ফোন বের করে ছবি তুলে নিতে মুহূর্ত মাত্র দেরী করেনি সুবর্ণ। ছবি উঠতে না উঠতেই চলমান শহরের সেই ফ্রিজ-শট সেকেণ্ডের ব্যবধানে এলোমেলো হয়ে পড়ল। গাড়ি এসে সিগনালে দাঁড়িয়েছে। সুবর্ণ তার ফোন খুলে ঝটাপট টাইপ করতে শুরু দেয়। ফ্রেমটা বেজায় ইন্টারেস্টিং। ভিতরের পাতার আর সব মেজো-সেজো প্রিন্টগুলির ভিতরে অনায়াসেই এই স্টোরিটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। পাঠকেরও চোখে পড়বে ঠিক, আর অনলাইন পাবলিশিংয়ের ক্ষেত্রে তো – দেখাই যাক। সুবর্ণ মনে মনে ভাবে, হয়তো বা ভাইরালও হয়ে যাবে। কেবল জুৎসই একটা শিরোনামেরই দরকার এখন।

 

বকুল তার ডাকনাম। সুবর্ণ অবশ্য আশাপূর্ণার অনুপ্রেরণাতেই মেয়ের ডাকনাম রেখেছিল বকুল। বকুলের ভালো নাম রাজনন্দিনী। হালকা সুবর্ণের নামের তুলনায় ভারিক্কি অনেকটাই। তবুও স্বামী চন্দনের পছন্দ। সুবর্ণ আপত্তি করেনি। রাজনন্দিনী নামে সত্যি করেই তার কোনও আপত্তিও ছিল না বোধহয়। কেবল বকুল ডাকনামটা এমনই জোর দিয়ে সে রাখবে বলেছিল, চন্দনের দিক থেকে কোনও আপত্তি থাকলেও তা সে জানিয়ে উঠতে পারেনি। সুবর্ণ মুখ টিপে হাসে। বকুলের ক্লাস এইট এখন। সুবর্ণই রোজ বকুলকে স্কুলে পৌঁছিয়ে দেয়। আজ তার ক্লাস টেস্ট রয়েছে। তাই এমন কাচঢাকা জানালার উবেরের ব্যবস্থা। নচেৎ গণপরিবহণের প্রতিই সুবর্ণের পক্ষপাতিত্ব চিরকালীন।

 

ছবিটা মেয়েকে দেখাল সুবর্ণ। “কেমন হয়েছে বল দিকি? ইঙ্গিতটা বোঝা যাচ্ছে?” জিজ্ঞেস করে সুবর্ণ। মেয়েকে সে গড়েপিটে তৈরি করতে চায়। রোজকার নোটস আর রেফারেন্স বইয়ের বাইরে, নিজের মতো করে, তার নিজস্ব ভাবনা-চিন্তার একটা জগৎ সে তৈরি হতে দিতে চায়। বকুল মায়ের হাতে ধরে রাখা মোবাইল ফোনটার দিকে তাকাল। সেও বুঝে ফেলেছে। মিটিমিটি হাসে বকুল। হাত নেড়ে কিছু দেখায়। সুবর্ণও মাথা নাড়ে এবার। সে ফোন সরিয়ে নেয়। স্টোরিটা লিখে ফেলতে হবে। আগের সিগনাল পেরিয়েছে অনেকক্ষণ।

 

সুবর্ণ বিশ্বাস করে তার মা দামিনী কোনও ভাবেই আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস পড়ে মেয়ের নাম সুবর্ণ রাখেননি। বরং সত্যবতী অথবা বকুলেরই জীবন সেই ট্রিলজির পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে, অনেকাংশে কাঙ্খিত বলে মনে হয়। কোনও মা’ই কি চাইবেন তাঁর মেয়ের জীবন সুবর্ণের মতো হয়ে উঠুক? আজকের সুবর্ণের তা মনে হয় না একেবারেই। বরং উপন্যাসের চরিত্র বকুলের ভারসাম্যকেই সে তার নিজের বকুলের ভিতর কুসুমিত হতে দেখতে চায়। বকুলকে সে বই পড়তে শিখিয়েছে। চন্দন কেবল সারাদিনই তার ব্যবসার কাজে বিলুপ্ত, যদিও সুবর্ণের উপর তার বিশ্বাস অগাধ। অথচ এই ‘অগাধ’ বিষয়টাকে নিয়েও সুবর্ণের কেমন জানি অস্বস্তিবোধ হয়। সে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করে। মানুষ কখনও ভালো বা খারাপ হয় না। মানুষ তার নিজের জীবনে একই সঙ্গে ভালো ও খারাপ হয়। চন্দনকেও সে এভাবেই দেখতে চায়। হাওয়ায় তার চুল উড়ছে। সুবর্ণ বকুলের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।

 

আচ্ছা, ঠিক কিই বা হতে চেয়েছিল সুবর্ণ? আজ তার কেরিয়র যেখানে দাঁড়িয়ে, সুবর্ণকে কি নিজের সেই জীবনের কারণে, নিজের ভিতর থেকে সন্তুষ্ট বলা যেতে পারে? নাকি, নিজেকেই আরও বেশি করে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রায়-অবদমিত, প্রায়-সুপ্ত, প্রায়-বেয়াড়া ইচ্ছেটাই, বারংবার তার সংশয়গ্রস্ত মস্তিষ্কে উঠে আসতে চায়? আদতে সুবর্ণ কি আরও একটু স্বাধীন হতে পারত? পেশাগত জীবনে? আদতে সকলেরই বোধহয় চারপাশে কেবল বিবিধ আয়তনের একেকটি বেলজার বসানো। কেউ কেউ বা সারাজীবনেও সেই ঘেরাটোপের আবদ্ধতাকে উপলব্ধি করে উঠতে পারে না। কেউ কেউ বা আবার কাচের সেই বেলজার-প্রাচীরের কাছাকাছি পৌঁছলেও, সেই ঘেরাটোপ অমান্যের পরিবর্তে, গোল গোল পরিসীমায় সেই বেলজার-প্রাচীরের বাকি অংশটুকুকেই কেবল বারেবারে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। এই ভাবনাতেই সুবর্ণের মাথায় খোঁচা দিয়ে ওঠে কন্ট্র্যাস্ট আর কন্ট্র্যাডিকশনের মতো ব্যাপার। বৈষম্য আর পরস্পরবিরোধিতার আশ্চর্য সহাবস্থান।

 

বকুলকে স্কুলে নামিয়ে যতক্ষণে সুবর্ণ অফিসে গিয়ে পৌঁছল, ততক্ষণে ‘ডেইলি রিভিউ’ পত্রিকার অফিস রীতিমতো জমজমাট। সামনে এখন বড় ঘটনা বলতে ভোট। অথচ সেই অর্থে এখনও অবধি কলকাতা অথবা পশ্চিমবঙ্গের যে রাজনৈতিক উত্তাপ, তা এখনও সহনশীলতাকে অতিক্রম করে যায়নি। কাজেই দেশ জুড়ে ‘ডেইলি রিভিউ’য়ের অন্যান্য যে ব্রাঞ্চ অফিসগুলি রয়েছে, সেগুলির তুলনায় এই সপ্তাহে অন্তত কলকাতা ডিভিশনের কর্মীদের কাজের চাপ তুলনামূলক ভাবে কম। হট্টগোল, গুলতানিরই পরিসর অধিক। তাই ফুরফুরে মেজাজেই সুবর্ণ কিউবিকলে গিয়ে বসল। সকালের তোলা ছবিটাকে ফোন থেকে নিয়ে সে প্রথমেই সেটাকে অফিসের দেওয়া ল্যাপটপে চালান করল। অন-দ্য-রান এমন সুন্দর একেকটি ফ্রেম, হঠাৎ কোনও অভাবনীয়, কাকতালীয় ঘটনার মতো এমন ভাবে হাতে এসে পড়লে, রসিক সুবর্ণের তখনই লটারির টিকিট কাটতে ইচ্ছে হয়।

 

পেজ-এডিটর সোনালী সামন্ত ভালো করে এক ঝলক ছবিটা না দেখেই মুখ তুলে তাকায়। “এই আইডিয়াটা তো অনেক পুরনো সুবর্ণ। এই নিয়ে তো মাসে-দুমাসেই একেকটা করে ছবি পাবলিশ করা হয়।” সুবর্ণ তবু হতাশ হয় না। সে জোর দিয়ে বলে, “তাও তুমি ক্যাপশনটা দ্যাখো সোনালীদি, আর ফ্রেমের ডানদিকে ওই বিজ্ঞাপনটাও। দুটোর মধ্যেকার যে ফার্স বা পরিহাস,” সোনালী হাত তুলে সুবর্ণকে থামিয়ে দেয়, “আই গেট ইওর পয়েন্ট সুবর্ণ। স্টোরিটা করছি আমরা। কিন্তু আরও নতুন কিছু চাই সুবর্ণ। সামথিং ডাইরেক্ট। সামথিং ইম্প্যাক্টফুল। আর হ্যাঁ অবশ্যই, মেয়েদের কথা – মানুষের কথা। ডাউনট্রডনদের কথা। তুমি তো জানো সুবর্ণ, আমরা বিশেষ ভাবে ডেইলি রিভিউতে জেণ্ডার-নিউট্রাল, এ্যাট দ্য সেম টাইম জেণ্ডার-ডাইভার্স খবর পাবলিশ করতে চাই।” সুবর্ণ হাঁপিয়ে ওঠে। আবারও সেই একগুচ্ছ গতানুগতিক কি-ওয়ার্ডের উদ্গীরণ। সে মাথা নাড়ে। হাঁপিয়ে উঠেও কেবল একবগ্গা ভঙ্গিতে নাছোড় সুবর্ণ আবারও জিজ্ঞেস করে, “সোনালীদি, তাহলে স্টোরিটা ফাইল করব কি?” জবাবে সোনালী ছোট্ট করে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। কম্পিউটার-পর্দায় মুখ ফেরায়, “নট মোর দ্যান থ্রি হাণ্ড্রেড ওয়ার্ডস। এর সঙ্গে যদি এবছরের রোড এ্যাক্সিডেন্ট সংক্রান্ত ট্রান্সপোর্ট মিনিস্ট্রির রিপোর্টটাকেও ছুঁয়ে যেতে পারো, আই থিংক দ্যাট উইল লুক গুড। প্রসঙ্গটা ভালো ভাবে বোঝা যাবে। ফায়ার ইট এ্যাওয়ে!” সুবর্ণ নিজের ডেস্কের দিকে এগিয়ে যায়।

 

ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল সুবর্ণ। সোনালীদি মিথ্যে বলেনি। পথ-নিরাপত্তা বিষয়ক এমন গুচ্ছ গুচ্ছ ফ্রেম ইন্টারনেট হাতড়ালেই চোখে পড়ে এখন। তবুও বাচ্চা মেয়েটির মুখের দিকে তাকালে কেমন যেন এক অদ্ভুৎ সারল্যের অনুভূতি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধবধবে সাদা উর্দিতে একজন পুলিশকর্মী লাল মোটরবাইক হাঁকিয়ে চলেছেন। পিছনে সম্ভবত তাঁরই স্ত্রী ও কন্যা সওয়ার। তাঁর মাথায় এবং তাঁর স্ত্রীয়েরও মাথায় ভারিক্কি হেলমেট। মাঝে বসা শিশুকন্যাটিরই কেবল কোনও নিরাপত্তা নেই। আর চলমান এই পরিবারেরও ঠিক মাথার উপর, হাই-মাস্ট ক্যানভাসে চণ্ডী লাহিড়ীর কার্টুন সহযোগে জ্বলজ্বল করছে কলকাতা পুলিশেরই বিজ্ঞাপন, “বাবার মাথা ভীষণ দামী হেলমেটেতে ঢাকা / ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা!” হাসতে গিয়েও হাসতে পারে না সুবর্ণ। পরিবহণ দফতরের তরফে প্রকাশিত পথ-দুর্ঘটনা সম্পর্কিত যে রিপোর্ট, তারই মধ্যেকার সংখ্যাগুলোকে সে যেন নিজের শরীরের ভিতর অনুভব করতে থাকে। তার অস্বস্তি হয়। স্পর্শকাতরতার মরসুম এখন। সুবর্ণ বোধহয় কোনও কোনও সময় অতিরিক্ত রকমে অনুভূতিপ্রবণ। যদিও বাইরে থেকে তা বুঝতে পারে না কেউ।

 

সোনালী সামন্ত হঠাৎ ডাক দিয়ে ওঠে। “সুবর্ণ, এ্যাসাইনমেন্ট গোখেল রোড। বাড়ির ডোমেস্টিক হেল্পকে চুরির অভিযোগে পুলিশ এ্যারেস্ট করছে। কিন্তু এলাকায় সামান্য আনরেস্ট। বোধহয় মেয়েটির উপরেও বাড়ির লোকের তরফে অত্যাচারের অভিযোগ আছে। ফটোগ্রাফার সূরযকে নিয়ে চলে যাবে একটিবার? প্রচণ্ড বড়লোক বাড়ির ঘটনা। উই ক্যান হ্যাভ এ্যান এ্যাঙ্গল। বাট, বি ইমপার্শিয়াল।” সোনালীদি কথা বলা শেষ করেই আবারও কম্পিউটার স্ক্রিনে মুখ ডুবিয়ে দেয়। সুবর্ণ তড়িঘড়ি নিজের স্টোরিটাকে একবার পড়ে শেষ করে নিয়ে মেইল পাঠিয়ে দেয়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতেই সে সোনালীদির মেইলে নোটিফিকেশনের আওয়াজ পায়। সোনালীদি কম্পিউটারের উপর থেকে বুড়ো আঙুল তুলে দেখায়।

 

হ্যাণ্ডব্যাগটাকে কাঁধে নিতে নিতেই সুবর্ণ সূরযকে ফোন করতে থাকে। গাড়ি পাওয়া যাবে কি না জানা নেই। গোখেল রোড অবশ্য এখান থেকে বেশি দূর নয়। সিঁড়ি দিয়ে সব গুছিয়ে নামতে নামতেই সুবর্ণের ফোনে নোটিফিকেশন আসে আবার। তার স্টোরিটা অনলাইনে এসে গিয়েছে। সুবর্ণ মনে মনেই হাতমুঠো করে নেয় একটিবার।

 

(চলবে)

লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার 

ছবি : সংগৃহীত 

0 Comments

Post Comment