নারী দিবস

  • 08 March, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1114 view(s)
  • লিখেছেন : অনুবাদ : চন্দন আঢ্য
১৮৭২ সালের ৩১ মার্চ সেন্ট্‌স্‌ পিটার্সবার্গে জন্মগ্রহণ করেন রুশ কমিউনিস্ট বিপ্লবী আলেকজান্দ্রা কল্লোনতাই। প্রথমে মেনশেভিক দলের সদস্য হলেও ১৯১৪ সালে যোগ দেন বলশেভিক দলে। উদার রাজনৈতিক মতাবলম্বী কল্লোনতাই বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও নিযুক্ত ছিলেন। সমসাময়িক অন্যান্য মার্কসীয় নারীবাদীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ১৯২৩ সালে নিযুক্ত হন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত হিসাবে। উদার নারীবাদী মতাদর্শ তাঁর কাছে ছিল বুর্জোয়া মতাদর্শ। ১৯৫২ সালের ৯ মার্চ, ৭৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

‘নারী দিবস’ কী? এই দিনের উদ্‌যাপন কি সত্যিই প্রয়োজনীয়? এই উদ্‌যাপন কি বুর্জোয়া শ্রেণির মেয়েদের, নারীবাদীদের, ভোটাধিকারপ্রার্থী মহিলাদের কিছুটা ছাড়, কিছুটা সুবিধা দেওয়ার প্রয়াস? শ্রমিক আন্দোলনের একতার পক্ষে এটা কি আদৌ ক্ষতিকর নয়?

এই ধরনের প্রশ্ন আজও রাশিয়ায় শোনা যায়। যদিও বিদেশে আর এই প্রশ্ন ওঠে না। জীবনই এই প্রশ্নের পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট উত্তর সরবরাহ করেছে।

সর্বহারা মহিলাদের আন্দোলনের একটি দীর্ঘ ও পোক্ত শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে নারীদিবস। শ্রমজীবী মহিলাদের সংগঠিত বাহিনীর সংখ্যা প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। কুড়ি বছর আগে শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে শ্রমজীবী মহিলাগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল বেশ কম। কর্মচারী-দলের মধ্যে পদমর্যাদা অনুসারে তাঁরা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিলেন...বর্তমানে ব্রিটিশ শ্রমিক সংগঠনে ২ লক্ষ ৯২ হাজারের বেশি মহিলা সদস্য আছেন; জার্মানিতে ২ লাখের কাছাকাছি মহিলাকর্মী শ্রমিক সংগঠনগুলির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আর কর্মচারী দলে রয়েছেন দেড় লক্ষ মহিলা কর্মী। অস্ট্রিয়াতে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মহিলা কর্মীর সংখ্যা ৪৭ হাজার এবং দলে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মহিলা। ইতালি, হাঙ্গেরি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে ও সুইটজারল্যান্ড--সর্বত্রই শ্রমজীবী মহিলারা নিজেদের সংঘবদ্ধ করছেন। মহিলাদের সমাজতান্ত্রিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় দশ লক্ষ ছুঁয়েছে। কী প্রচণ্ড শক্তিশালী এই বাহিনী। এই শক্তিকে পৃথিবীর ক্ষমতাসীনরা অবশ্যই গ্রাহ্য করতে বাধ্য হবেন যখন জীবনধারণের ব্যয়, মাতৃত্ব বীমা, শিশু শ্রম এবং নারীশ্রম রক্ষার আইন বিষয়ক প্রশ্নগুলি উঠে আসবে।

আগে এমনও দিন ছিল যখন শ্রমজীবী পুরুষেরা মনে করতেন পুঁজির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধকল তাঁদেরকে নিজেদের কাঁধেই বহন করতে হবে। মহিলা সহকর্মীদের সাহায্য ছাড়া একাই তাঁদেরকে এই ‘পুরোনো পৃথিবী’-র সঙ্গে কারবার করতে হবে। কিন্তু স্বামীরা বা পিতারা যখন কর্মহীন হয়ে পড়লেন, যখন প্রয়োজনের তাগিদে শ্রমজীবী মহিলারা কাজের জগতে বাধ্য হয়ে যোগ দিলেন, তখনই শ্রমজীবী পুরুষেরা সচেতন হলেন যে মহিলাদের শ্রেণি-অসচেতন ভেবে পিছনে ফেলে রাখলে আখেরে তাতে তাঁদেরই উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং তাঁদেরকেই তা পিছনে টেনে রাখবে। সচেতন যোদ্ধাদের সংখ্যা যত বেশি বাড়বে, সাফল্যের সম্ভাবনাও তত বেশি জোরালো হবে। কিন্তু যে সব মহিলা বাড়িতে স্টোভের পাশে কাজ করে চলেন, সমাজে বা পরিবারে যাঁদের কোনো অধিকার নেই, তাঁরা কোন্‌ স্তরের সচেতনতা নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন? তাঁদের তো নিজেদের স্বতন্ত্র কোনো ‘ধারণা’-ই তৈরি হয়নি। পিতা বা স্বামীর নির্দেশ অনুসারেই তাঁরা সব কিছু করে চলেন...

মহিলাদের এই পশ্চাদপদতা, অধিকারের অভাব, অধীনতা, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং উদাসীনতা সমাজের শ্রমজীবী শ্রেণিকে কোনো সুবিধা তো দিতেই পারে না, বরং সরাসরি তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কীভাবে একজন মহিলা শ্রমিককে আন্দোলনের শরিক করে তোলা যায়? কীভাবে তাঁকে সজাগ ও সচেতন করা যায়?

বিদেশে সামাজিক-গণতন্ত্র এই সমস্যার কোনো যথাযথ সমাধান অবিলম্বে খুঁজে পায়নি। শ্রমিক সংগঠনগুলির দরজা সেখানে মহিলা শ্রমিকদের জন্য খোলা ছিল। কিন্তু গুটিকতক মহিলা কর্মচারীই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। কেন এরকম হল? আসলে শ্রমিক শ্রেণি প্রথমত উপলব্ধিই করতে পারেনি যে মহিলা কর্মীরাই হলেন আইনত এবং সামাজিকভাবে সবচেয়ে বঞ্চিত শ্রেণি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাঁদের চোখ রাঙিয়ে, ভয় দেখিয়ে, নিগ্রহ করে চলা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে তাঁদের হৃদয় ও মনকে উদ্দীপিত করার জন্য একটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এখন এমন ভাষায় কথা বলতে হবে মহিলা হিসাবে যা তাঁরা বুঝতে পারবেন। কিন্তু কর্মীরা এই কথা দ্রুত অনুধাবন করতে পারেননি যে, শোষণ ও অধিকারাভাবের এই পৃথিবীতে মহিলারা শুদ্ধমাত্র তাঁদের শ্রমের বিক্রেতা হিসাবেই অত্যাচারিত নন; একজন মা এবং নারী হিসাবেও সমান অত্যাচারিত। যাই হোক, শ্রমিকদের সমাজতান্ত্রিক দল যখন এটা বুঝতে পারলো, তখনই তারা অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে একদিকে মহিলাদের ঠিকা-কর্মীত্ব, অন্যদিকে নারীত্ব ও মাতৃত্ব--এই দুই ভূমিকার প্রতিরক্ষার জন্য জরুরি বিষয়গুলি গ্রহণ করলো।

পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সমাজতান্ত্রিকরা এরপর মহিলা কর্মীদের সুরক্ষা, তাঁদের এবং সন্তানদের জন্য বীমা, মহিলাদের রাজনৈতিক অধিকার এবং মহিলাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বিশেষ সুরক্ষার দাবি জানায়।

যত স্পষ্ট করে শ্রমজীবী কর্মী সংগঠন মহিলা কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় এই দ্বিতীয় লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যটির গুরুত্ব বুঝতে পারে, মহিলা কর্মচারীরা ততই স্বেচ্ছায় পার্টিতে যোগদান করতে থাকেন, ততই তাঁরা উপলব্ধি করতে থাকেন যে, পার্টিই হল তাঁদের প্রকৃত রক্ষক। শ্রমিক শ্রেণিও লড়াই করে চলেছে তাদের মহিলা সহকর্মীদের একান্ত নিজস্ব এবং জরুরি প্রয়োজনগুলির জন্য। সংঘবদ্ধ ও সচেতন মহিলা কর্মীরাও নিজে থেকেই এই দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যকে যথাসাধ্য বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের উপর এখন ন্যস্ত দায়িত্ব হল আরও বেশি মহিলা কর্মচারীকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত করানো। প্রত্যেক দেশেই পার্টির নিজস্ব মহিলাদের সমিতি, সচিবালয় এবং অফিস আছে। এই সমস্ত মহিলা সমিতি এখন রাজনৈতিকভাবে অসচেতন এক বৃহৎ নারীগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ পরিচালনা করে, শ্রমজীবী মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলে এবং তাঁদের সংগঠিত করে। এই সমিতি সেই সমস্ত প্রশ্ন এবং দাবি-দাওয়াও অনুসন্ধান ও পরীক্ষা করে দেখে যা মহিলাদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে বা নাড়া দেয়। যেমন সন্তানসম্ভবা ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের সুরক্ষা ও সংস্থানের বন্দোবস্ত করা, মহিলাদের জন্য শ্রম-আইন প্রণয়ন করা, পতিতাবৃত্তি ও শিশুমৃত্যুর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো, মহিলাদের রাজনৈতিক অধিকারলাভের দাবি, আবাসন উন্নতি, জীবনযাত্রার ক্রম-ঊর্ধ্বমুখী খরচের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালানো ইত্যাদি।

সুতরাং পার্টির সদস্য হিসাবে মহিলা কর্মচারীরা জোরকদমে লড়াই চালাচ্ছে সাধারণ শ্রেণি-সমস্যার বিরুদ্ধেই। একইসঙ্গে যে সমস্ত প্রয়োজন এবং দাবি-দাওয়া একজন মহিলা, গৃহবধূ এবং মা হিসাবে তাঁদের একান্ত আবশ্যক, সেই সমস্ত প্রয়োজন ও দাবিকে তাঁরা স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলছেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পার্টিও মহিলা কর্মচারীদের এই সমস্ত দাবিকে সমর্থন করছে এবং তাঁদের হয়ে লড়াই করছে। ফলত শ্রমজীবী মহিলাদের প্রয়োজনীয়তা এখন সাধারণ শ্রমিকস্বার্থের অপরিহার্য অংশ।

‘নারী দিবস’-এ সংঘবদ্ধ মহিলা কর্মীরা তাঁদের অধিকারের অভাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে থাকেন।

অনেকে নিশ্চয়ই বলবেন, মহিলা কর্মচারীদের বিষয়টিকে কেন পৃথক করা হচ্ছে? শ্রমজীবী মহিলাদের জন্য কেন বিশেষ ‘নারী দিবস’ বা বিশেষ প্রচারপুস্তিকা বা সভা-সম্মেলন? চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বিষয়টি তাহলে কি এরকম দাঁড়াচ্ছে না যে, ‘নারী দিবস’ আসলে নারীবাদী এবং বুর্জোয়া মহিলা ভোটাধিকারী প্রার্থীদের জন্য কিছুটা ছাড়?

কেবল যাঁরা সমাজতান্ত্রিক নারীদের আন্দোলন এবং বুর্জোয়া শ্রেণির মহিলা ভোটাধিকার প্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে কোনো মূলগত পার্থক্য বুঝতে পারেন না, তাঁরাই এরকম চিন্তাভাবনা করে থাকেন।

নারীবাদীদের লক্ষ্য কী? তাদের লক্ষ্য হল ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় তাঁদের স্বামী, পিতা বা ভাইয়ের সমান সুবিধা, ক্ষমতা ও অধিকার ভোগ। শ্রমজীবী মহিলাদের লক্ষ্য কী? জন্ম বা সম্পদ সূত্রে প্রাপ্ত সকলপ্রকার সুবিধা ও অধিকারের বিলোপসাধন। তাঁর ‘মনিব’ পুরুষ না নারী সে বিচার করা মহিলা শ্রমিকের পক্ষে অপ্রয়োজনীয়। নিজের শ্রেণির সকলের সঙ্গে একত্রে তিনি চান একজন কর্মী হিসাবে তাঁর অবস্থানের কিছুটা সুবিধা বা আরাম।

নারীবাদীরা সবসময়ই এবং সর্বত্রই সমানাধিকার চেয়ে এসেছেন। মহিলা কর্মীরা উত্তরে জানিয়েছেন : আমরা পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান অধিকার চাই। কিন্তু আমরা কিছুতেই ভুলে যেতে পারি না যে, আমরা কেবল শ্রমিক এবং নাগরিকই নই, আমরা মা-ও বটে। একজন মা হিসাবে, ভবিষ্যতের জন্মদাত্রী হিসাবে, আমরা নিজেদের এবং সন্তানদের জন্য চাই বিশেষ মনোযোগ ও চিন্তাভাবনা, রাষ্ট্র এবং সমাজের থেকে বিশেষ সুরক্ষা।

নারীবাদীরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক অধিকার লাভের। যদিও, এক্ষেত্রেও, আমাদের পথ পৃথক।

বুর্জোয়া শ্রেণির মহিলাদের কাছে রাজনৈতিক অধিকারলাভ হল শ্রমজীবী মানুষের শোষণের উপর অধিষ্ঠিত এই জগতে নিজেদের পথকে আরও সুগম ও সুরক্ষিত করে তোলা। আর শ্রমজীবী মহিলাদের কাছে রাজনৈতিক অধিকারলাভ হল পাথুরে ও রুক্ষ পথে এক প্রাগ্রসর পদক্ষেপ যা তাঁদের পৌঁছে দেবে কাঙ্ক্ষিত শ্রম-রাজত্বে।

তবে শ্রমজীবী মহিলাদের এবং বুর্জোয়া শ্রেণির ভোটাধিকার আন্দোলনের মহিলাদের গৃহীত পথ বহুদিন থেকে পৃথক। জীবন তাঁদের সামনে যে উদ্দেশ্য নির্ধারিত করে দিয়েছে তাও বেশ আলাদা। মহিলা কর্মী এবং মহিলা মালকিন বা সত্ত্বাধিকারীর স্বার্থের মধ্যেও খুব বড়ো রকমের বিরোধ আছে। একইরকম বিরোধ আছে ভৃত্য আর পরিচারিকার স্বার্থের মধ্যে... এঁদের মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে যোগাযোগ, মিটমাট বা এককেন্দ্রাভিমুখিতা নেই বা থাকতে পারে না। ফলত বিশেষ ‘নারী দিবস’ বা বিশেষ নারী সম্মেলন বা বিশেষ প্রকাশনা সংস্থা নিয়ে শ্রমজীবী পুরুষদের আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

মহিলা কর্মীদের মধ্যে সংঘটিত সবরকম বিশেষ এবং স্বতন্ত্র কর্মকাণ্ড আসলে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার একটি সহজ পদ্ধতি। এইসকল কর্মকাণ্ডই তাঁদেরকে সেই সব সহযোদ্ধার সঙ্গে এক পঙ্‌ক্তিতে এনে দাঁড় করায় যাঁরা উন্নত ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছেন... নারী দিবস এবং মহিলা কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত এই ধীর ও নিখুঁত কাজ কিন্তু বিভেদমূলক নয়, বরং তা শ্রমজীবী শ্রেণির ঐক্যসাধনের কাজই করে থাকে।

পুরুষ-নারী নির্বিশেষ সাধারণ শ্রেণিস্বার্থের জন্য কাজ করার আনন্দ এবং একইসঙ্গে নারীমুক্তির জন্য সংগ্রাম মহিলা কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করুক ‘নারী দিবস’ উদ্‌যাপনে যোগদান করতে।

মূল লেখা : Women’s Day

লেখক : Alexandra Kollontai

পুনঃপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশ ৬ আগস্ট, ২০২১

আনুবাদক : অধ্যাপক ও সমাজকর্মী 

ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

 

0 Comments

Post Comment