নষ্ট_কলম 

  • 21 May, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 708 view(s)
  • লিখেছেন : শর্মিলা ঘোষ 
‌করোনাকাল-‌লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর হাহাকার, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের দুর্দশার কথা অল্পবিস্তর আমরা সবাই জানি। জানেন লেখক অলোকাও। মর্মান্তিক ছবিও ফুটেছে তাঁর গল্পে। কিন্তু বাস্তবটা একেবারে উলটো। এই  অণুগল্পটিতে ধরা পড়েছে সেই দ্বিচারিতা।  

সকাল বেলা উঠেই অলোকা ফ্রিজ থেকে সব্জিগুলো বের করে। গলদা চিংড়িটা নারকোল আর পোস্তবাটা দিয়ে করবে। ছেলেটা কদিন ধরে পায়েস খাবো করে জ্বালাতন করছে। ছানা কাটিয়ে রেখেছে, আজ ছানার পায়েসও করবে। তারপর আবার লেখালেখির কাজ শুরু করবে। ভাত আর তার সাথে পাঁচপদ রেঁধে সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে ফেলে অলোকা। এবার ছবি তুলে ফেসবুকে দেবে। ফেসবুকে আবার একদল ন্যায়নিষ্ঠ সমাজবাদী জুটেছে। এই লকডাউনের সময় খাবারের ছবি পোস্ট করলে রেগে কাঁই। ছবি পোস্ট করে অলোকা স্নান সেরে নেয়, এসি চালিয়ে টেবিলে বসে। আজ আবার হাভাতে মানে যারা এই সময়ে খেতে পাচ্ছে না, দিন আনা দিন খাওয়া মজুর তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা লিখতে হবে।

খুব সুন্দর করে একটা মর্মস্পর্শী গল্প লিখে ফেলে সে, সেখানে ঝুপড়ি থেকে কিলবিল করা বাচ্চা, মজুরের ফাটা পা সব আছে, নুন দিয়ে ভাত খাওয়া আছে, শীর্ণ চেহারার মা-‌ও আছে। যাক গল্পটা নেবে গেছে, এবার নাম ঠিক করার পালা, নাম দেয় ‘‌‘‌পরিযায়ী’‌’‌। ব্যাস একটা সাহিত্য গ্রুপে পোস্ট করে দেয় অলোকা। আধঘন্টার মধ্যে ফোন আসে প্রকাশকের, কি লিখেছেন দিদি, নারীবাদ থেকে শ্রমিক, ভুখা পেট, ফাটা পা, কি নেই! লকডাউন উঠে গেলেই এই লেখার জন্য আপনি সম্মানিত হবেন দিদি। প্রকাশক ফোন কেটে দেয়। 
অলোকা ছেলেকে ডাকে, আজ আবার খাবার আইটেমও ওর পচ্ছন্দের। কলিং বেল বাজে এই সময়, সামনের পানের দোকানের ছেলেটাকে মিষ্টি পানের অর্ডার দেওয়া ছিল। নিয়ে এসেছে। কী গো খেতে এসো সব, প্লেট সাজাতে থাকে অলোকা ...

ছবি :‌ সংগৃহীত
লেখক :‌ শিক্ষক, গল্পকার,কবি,প্রাবন্ধিক

0 Comments

Post Comment