- 16 June, 2020
- 0 Comment(s)
- 980 view(s)
- লিখেছেন : তামান্না
"যৌন ইঙ্গিতবাহী ভাষিক অপমানের আরেকটি রূপ হল চরিত্রবিষয়ক গালাগালি। আমাদের সমাজব্যবস্থায়, বলা বাহুল্য, দুশ্চরিত্র বলে গালাগালি দিলে নারীর ক্ষেত্রে যতটা তীব্র হয়, পুরুষের ক্ষেত্রে ততটা হয় না।" (তথ্যসূত্র - বাংলা স্ল্যাং: সমীক্ষা ও অভিধান, অভ্র বসু) অশ্লীল গালাগালির ক্ষেত্রে যৌনতা ও অবৈধ সম্পর্ক অগ্রগণ্য। এই নোংরামিকে হাতিয়ার করে জামিয়া কন্যা সফুরা জারগারকে রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্তা করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সে সোচ্চার হয়েছিল বলে, তাঁকে কড়ায়গণ্ডায় তার মাশুল দিতে হচ্ছে। গত ১০ এপ্রিল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার রিসার্চ স্কলার সফুরা জারগার কে কালাকানুন UAPA-র অধীনে গ্রেফতার করা হয়।
বিজেপির কপিল মিশ্র সহ একাধিক নেতা ও বিজেপি আইটিসেল সফুরার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানো শুরু করেছিল, তাকে গ্রেফতার করার পর। আবার, যখন গত ৪ জুন হাইকোর্ট তাঁর জামিন খারিজ করে দেয়, তখন পুনরায় উল্লসিত হয়ে আইটিসেল টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে রটাতে থাকে সে বিবাহিত নয়। অনলাইন নিউজ পোর্টালের কমেন্ট বক্স ভরে যায় কদর্য মন্তব্যে। বিয়ে না করেই সে কিভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে তাই নিয়ে রসালো মিমে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে যায়। একজন দেশদ্রোহীর চরিত্র হনন করে নেট নাগরিকরা চরম আনন্দোৎসব উদযাপন করতে থাকে! এবার আসা যাক, সফুরা কি ভাবে দেশদ্রোহী হয়ে উঠলেন সেই প্রসঙ্গে। গত ডিসেম্বরে দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে। তখন সফুরা জামিয়া সমন্বয় কমিটির (জেসিসি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সংগঠন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, ভারতের মত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সংবিধানের বিপক্ষে গিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) মাধ্যমে দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুর ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। এইসময়, সফুরা মিছিলে যোগ দিয়েছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক দেশে নিজের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রাপ্তিতে সোচ্চার হয়েছেন। তখন তাকে একবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে, তিনি বেল পেয়ে পুনরায় আন্দোলনে যোগ দেন। শাহীনবাগে গিয়ে প্রতিবাদ করেন।
২২-২৩ ফেব্রুয়ারি সফুরা জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের পাশে যোগ দেন রাস্তা অবরোধে। সেখানে নাকি তিনি উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেন। তাঁর সেই উস্কানিমূলক বক্তৃতার জন্য ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি দাঙ্গা হয়। শ্রোতারা তাঁর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ে। তবে মজার বিষয় সেই বক্তৃতার অডিও, ভিডিও পাওয়া যায় নি। তিনজন সাক্ষী আছে, তারা যে সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিল সে প্রমাণ নেই! দেড়মাস ধরে সফুরার সেই ভয়ংকর বক্তৃতার বিশ্লেষণ করে দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট ১১ এপ্রিল দু- দিনের জন্য পুলিশ কাস্টডি রায় দেন। ১৩ এপ্রিল বেল পান, কিন্তু আদালতের ভেতরে আবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিহার জেলে ১৫ এপ্রিল থেকে তিনি আছেন। ২০ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা, অস্ত্র দখল, হত্যার চেষ্টা, সহিংসতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যাসহ ১৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ধর্মের নামে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টির অভিযোগও আনা হয়। তাই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এরপর থেকে চলছে দড়ি টানাটানি খেলা, ১৮ এপ্রিল, ২ মে জামিন পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়। ২৬ মে আদালত জানায়, ২৫ জুন পর্যন্ত তাঁর বন্দীদশা চলবে। ৩০ মে জামিনের আবেদন করলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
আবার, ৪ জুন ভিডিও কনফারেন্সে মামলার শুনানি চলে, দীর্ঘ আট ঘন্টার বাকবিতণ্ডার পর পাটিয়ালা হাউস আদালতের বিচারপতি জানান, ইউএপিএ ধারা থেকে বাঁচতে পারবেন না সফুরা -'ধিকধিক জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ে খেলা করবেন, আর সেই জ্বলতে থাকা আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়লে কখনই হাওয়াকে দোষ দেওয়া যায় না৷’ (তথ্যসূত্র : খাসখবর, ৫/০৬ /২০) অন্তঃসত্ত্বা সফুরা, পিসিওএস লক্ষণে আক্রান্ত সফুরা, কোন সহানুভূতি পাননি বিচারপতির কাছ থেকে। কারণ তিনি নাকি দেশদ্রোহী। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, এ বিষয়টাকে প্রাধান্য দিয়েও তাঁর জামিন গ্রাহ্য করা হয়নি। দেশে যাইহোক, মুখ বুজে জনগণকে সহ্য করতে হবে সরকার এই নীতিতেই বিশ্বাসী। সরকারের নীতির সমালোচনা করায় দিল্লি পুলিশ ‘আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের’ বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে জানান সফুরার আইনজীবী। এদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী টুইটে ঘোষণা করেন- সরকারের সমালোচনা করুন, সরকার স্বাগত জানাবে। বাস্তবটা সম্পূর্ণ অন্যরকম সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে আইনি জালে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে, কন্ঠ রোধ করে দেওয়া হচ্ছে। সফুরার মত নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করে সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে দমাতে সরকার লকডাউনকে ব্যবহার করছে, এমন অভিযোগ করছেন আইনজীবীসহ অধিকারকর্মীরা। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। (তথ্যসূত্র : প্রথম আলো, ২৮/০৪/২০)
দিল্লিতে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। বিশিষ্টদের মতে বিগত কয়েক দশকে এমন জঘন্যতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি, ১৯৮৪-র পর রাজধানীতে এমন দাঙ্গা হয়।
দিল্লির রাস্তাঘাট এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্বলছিল সেইসময়। জামিয়া মিলিয়াতেও হামলা হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। সেই দাঙ্গার মূল হোতা কে ছিলেন, আমাদের আজ কারো অজানা নয়। এইসময় শহরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছিল – এবং পাশাপাশি বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রসহ অন্য মন্ত্রীরাও প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে নানা উসকানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ একটি বক্তৃতায় কপিল মিশ্রর দিল্লির হিংসা ও সিএএ বিরোধী একটি ভিডিওর সমালোচনা করেন। এরফলে দুনিয়া জুড়ে এই নেতার একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি চিত্রিত হয়েছে। দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে দিল্লি পুলিশ একটি চার্জশিট পেশ করেছেন, অদ্ভুতভাবে সেখানে 'হেট স্পিচ' দেওয়া কোন বিজেপি নেতার নাম নেই! নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যারা প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আমাদের সরকারের এমন দ্বিচারিতা দেখে সত্যিই তাজ্জব হয়ে পড়ি!
সফুরা গ্রেপ্তারের পর থেকে (১২ মে পর্যন্ত ) পাঁচবার আবেদন করার পর তাঁর স্বামীও আইনজীবীর সাথে দু'বার পাঁচ মিনিটের জন্য ফোনে কথা বলার অনুমতি পেয়েছেন। কোভিড -১৯-র জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়। উনার আইনজীবী বলেন, আমি জেনে অবাক হয়েছি কোয়ারেন্টিনের নামে সফুরাকে একটি নির্জন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। ভাবতে পারেন, তাঁর ওপর কী ধরনের মানসিক চাপ পড়ছে?' আবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেন, সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বন্দিত্বে তিনি খুবই ঝুঁকিতে রয়েছেন। আদালতের আদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিচারিক হেফাজতে তাঁর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, এ ব্যাপারে পুরোপুরি দায়বদ্ধ আদালত।' (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ২৭/০৪/ ২০) সফুরার আইনজীবী আরও জানান, জাফরাবাদ মামলায় সফুরার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও জামিন দেওয়া হয়। তবে আরেকটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু কীসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে কথা খোলসা করেনি পুলিশ। অমূলক অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তঃসত্ত্বাকে আটক করে রাখলে গর্ভপাতের মতো অপ্রিয় ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
কোভিডের জন্য প্যারলে অনেক আসামী মুক্তি পেয়েছেন। তারা কারা জানার আগে আমরা একবার দেখে নেব দিল্লি দাঙ্গা, জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয় হামলায় যারা যুক্ত ছিল তারা এখন কোথায় আছে? জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয় হামলায় এবিভিপি কর্মী কোমল শর্মার নাম জড়িত ছিল। সে কিন্তু জেলে নেই।
বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্য করেই জনসভা থেকে স্লোগান দেন- দেশের সঙ্গে যারা বেইমানি করছে তাদের গুলি করে মারা হবে। তাকে কিন্তু গ্রেফতার করা হয়নি।
শাহীনবাগে ধর্নামঞ্চের কাছে কপিল গুর্জর গুলি চালায়। ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সে জামিন পেয়ে গেছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি কপিল মিশ্র শহরের মৌজপুর চকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই হুমকি দিয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে থাকা পর্যন্ত তারা চুপ থাকবেন – কিন্তু তারপরও প্রতিবাদকারীরা রাস্তা খালি না করলে তারা জোর করে তাদের তুলে দেবেন, পুলিশের কথাও শুনবেন না।
এবার দেখে নেব কারা কোভিডের জন্য মুক্তি পেয়েছেন -
মনু শর্মা কে মনে আছে? হরিয়ানা কংগ্রেস নেতার পুত্র জেসিকা লাল কে হত্যা করেছিল। এর জেলে থাকার মেয়াদ ছিল ২০২৩ পর্যন্ত। কিন্তু করোনার সংক্রমণের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রজ্ঞা ঠাকুর জেলের বাইরে, এই মহীয়সী মালেগাঁও ব্লাস্ট মামলায় অভিযুক্ত, ইনি জানিয়েছিলেন নাথুরাম গডসে দেশপ্রেমিক! এছাড়া নির্বাচনী হলফনামা দেওয়ার সময় বিজেপির বড় বড় কেষ্টবিষ্টুরা জানিয়েছিলেন তাদের নামে অপরাধের মামলা রয়েছে। এই অপরাধীরা দেশের মন্ত্রী! দিল্লি দাঙ্গার সময়ে অস্ত্র সহ মণীশ সিরোহি গ্রেপ্তার হন। করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, তাই তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। করোনার জন্য কুখ্যাত বহু আসামী ছাড়া পেয়েছে। কেবলমাত্র দেশদ্রোহিতার জন্য সফুরা ছাড়া পাননি।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির কমরেডরা ৭ মে সফুরাকে গ্রেপ্তার, সোশাল মিডিয়ায় সফুরাকে হেনস্থার বিরুদ্ধে, কপিল মিশ্র-র গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হন। কলকাতা, হুগলী, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব বর্ধমানে সমিতির কমরেডরা বিক্ষোভ করেন। সফুরার বোন সামিয়া জানিয়েছেন, তাঁদের বাবা তাঁদেরকে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে শেখাননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বলেছেন। তাই সফুরা এত সাহসী ও নির্ভীক। সফুরার সহপাঠী ও শিক্ষক জানিয়েছেন সে প্রতিবাদী ও লড়াকু মনের মানুষ। সফুরার স্বামী শিরঅল জানিয়েছেন- সফুরার এই লড়াকু মানসিকতার জন্য তিনি আগের থেকে আরও বেশি সফুরাকে ভালবাসেন।
মার্কিন আইনজীবী সংগঠন ‘দ্য আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সফুরাকে জেলে বন্দি করে রাখা আন্তর্জাতিক আইন-বিরোধী কাজ।(তথ্যসূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪/০৬/২০) মার্কিন সংগঠনটি তাঁদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, বহু আন্তর্জাতিক আইনি চুক্তিতে ভারত অংশগ্রহণ করেছে। সেই সমস্ত চুক্তি অনুসারে, অভিযুক্তকে বিচারের আগে বন্দি করা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। সফুরার মামলায় বিচারের আগে তাঁকে বন্দি করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারত সরকারের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সফুরা জামিন পেলে কী ক্ষতি করবে? তাঁর বিরুদ্ধে কী প্রমাণ আছে? যথারীতি সরকার পক্ষ জবাব দিতে পারেনি, উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করেনি, তাই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সফুরাকে অবিলম্বে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক। কিন্তু অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ মনে করে সফুরা ভয়ানক সন্ত্রাসী। প্রসঙ্গত দিল্লি দাঙ্গা মামলায় কিন্তু মুসলিমদের নাম আছে। সাংবাদিক এক্টিভিস্ট সারা নাকভি বিবসিকে বলেছেন –বেশিরভাগ মিডিয়াতে যেভাবে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের দেশদ্রোহী সাজানো হয়েছে- দিল্লি পুলিশ সেভাবে তদন্ত করেছে। তিনি আরো জানান- “মনে রাখতে হবে ঐ প্রতিবাদ ছিল নাগরিকদের সমান অধিকারের দাবিতে একটা সিভিল রাইটস মুভমেন্ট। তবে দিল্লি পুলিশের চার্জশিট পড়লে মনে হচ্ছে মুসলিমরা এত চালাক আর ক্ষমতাশালী যে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের উপর দাঙ্গা চালিয়েছে!” (তথ্যসূত্রঃ বিবিসি নিউজ বাংলা, ১০/০৪/২০)
তবে মেয়েটা শিকল ভেঙে বেশ করেছে।
মেয়েটা শিকল ভেঙে বেশ করেছে! (রুদ্র গোস্বামী)
যেভাবে ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস হ্যাশট্যাগে সারা বিশ্ব সরব হয়েছে। সেই একইরকম ভাবে আমরা সরব হতে পারিনা কি? আমরা বিশ্ববাসীকে জানাতে পারি না মাইনরিটি লাইফ ম্যাটারস্? আজ একজন সফুরাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে হাজার হাজার সফুরা আওয়াজ তুলবে ! কত জনের কন্ঠরোধ করবেন? কত মেয়েদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন কপিল মিশ্ররা? সত্যের লড়াইয়ে যিনি পথে নেমেছেন, তাঁকে দুর্বল করবেন অসতীত্বের ছাপ মেরে? লিঙ্গবৈষম্যের ভাষা-রাজনীতি কৌশলে, দেহকেন্দ্রিক (সতী-অসতী) শব্দবন্ধনের আক্রমণে সফুরার লড়াই থেমে নেই। গরাদের আড়াল থেকে চারিয়ে যাচ্ছে সে বার্তা।
ছবি : সংগৃহীত
লেখক : অধ্যাপক ও সমাজকর্মী
0 Comments
Post Comment