- 12 October, 2025
- 0 Comment(s)
- 100 view(s)
- লিখেছেন : মীরা কাজী
ভারত গড়ার কাজে বাঙালিদের অবদান অনস্বীকার্য। পরাধীনতার যুগেও যেমন আজও তেমনই । দেশকে পরাধীনতার শৃংখল মোচনের জন্য যে সমস্ত বাঙালি বীর,বীরাঙ্গনা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থেকেছেন, প্রাণ দিয়েছেন ইতিহাস তাদের কাজের সাক্ষী। সকলে তাদের কথা জানে। কিন্তু নেপথ্যে কত বাঙালি বীর যুবক, বাঙালি বীরাঙ্গনা নারী নিজের জীবন তুচ্ছ করে এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, প্রয়োজনে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের কথা ইতিহাসে লেখা নেই। তেমন একজনের কথা আজ বলব।
সাল ১৯৪২। সারা ভারতবর্ষ উত্তাল। একদিকে নেতাজীর নেতৃত্বে সসস্ত্র আন্দোলন অন্য দিকে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আইন অমান্য আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছে। সে সময় গ্রাম-বাংলার এক সাধারন কিশোরী কীভাবে এই বিরাট কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছিল সেটাই এই গল্পের উপজীব্য বিষয়।
গল্পর নাম -পারুলবালা
“ সুনি দিদি! তুমি এত রেতে ইদিকে কোতায় চললে?”
“ ওই যেখেনে যাই, পুকুর ঘাটে”। একজন ঝিয়ের প্রশ্নে পিসির গলা নকল করে উত্তর দিল পারুল।
“ খানিক আগেই তো একবার ডুবে এলে?”
“ সে তো এলুম! গায়ের জল না শুকোতেই কোত্থেকে ময়নার মা এসে নোংরা আঁচলটা গায়ে লাগিয়ে দিল! জেনে বুঝে কী করে থাকি বল?”
“তাহলে যাও, আবার ডুবে এস। আমিও যাই হাজার কাজ পড়ে আছে”।
পারুল দেখতে অনেকটা তার পিসি সুনয়নীর মত। বয়সেও পিসি –ভাইঝির মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। তাই ঝি কোনও সন্দেহ করল না।
ঝি একটু তফাত হতেই ঘড়া থেকে গয়নার পুঁটলিটা বের করে, সেটাকে পরনের থান কাপড়ের আঁচলে ঢেকে পা চালাল পারুল। নিজের পাড়াটা কোনও রকমে পার হতে পারলে আর ভয় নেই। গ্রামের রাস্তা ফাঁকাই থাকবে। গ্রামের সমস্ত মানুষ ভেঙ্গে পড়েছে তাদের বাড়িতে।
নিজের গ্রাম ছাড়াতেই মাঠের রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে অনেকদিন আগে একবারমাত্র সে এসেছিল। পিসির সাথে মেলা দেখতে। সে তখন বেশ ছোট। তারপর আর কখনও এদিকে আসেনি। এই রাতের অন্ধকারেও ভয় লাগছেনা তার। ভয়-ডর সব পুরোনো খোলসের মত আর সমস্ত কিছুর সাথে ছেড়ে এসেছে। আচমকা একটা লতায় পা জড়িয়ে হোঁচট খেল পারুল। মুখ দিয়ে “আঁক!” করে একটা শব্দ বের হল। গয়নার পুঁটুলিটা খানিকটা তফাতে ছিটকে পড়ল। সেটাকে তুলে ফের হাঁটতে লাগল। একটা আঙ্গুলের নোখ বোধ হয় উড়ে গেছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। হোক! কোনও বাধাই আজ পারুলকে থামাতে পারবে না।
অলুকেন্দু বিশ্বাসের আদরের মেয়ে পারুল বালা। সে সময় দশ পার হবার আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হত। দুই জমজ দাদা স্কুলে পড়ে দেখে সেও বায়না ধরল- পড়বে। মেয়ের জন্য বাড়িতেই পড়া শোনার ব্যবস্থা করলেন অলোকেন্দু বাবু। গান শেখার ব্যবস্থাও হল।
পারুলের দুই দাদা ততদিনে স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলেজ যেতে শুরু করেছে। বৈঠকখানায় তাদের বন্ধুরা আসে, আড্ডা হয়। পারুলের দায়িত্ব থাকে তাদের জলখাবারের জোগান দেওয়া। দাদাদের বন্ধুরা, বিশেষ করে অমলদা, বিকাশদা পারুলকে খুব স্নেহ করে। তার জন্য উপহার কিনে আনে- পুতুল, চুলের ফিতে, চুড়ি। আড্ডায় যে সব আলোচনা হয়, সেগুলো শুনতে শুনতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভাসা ভাসা একটা ধারনা জন্মায় পারুলের। মাষ্টারমশাইও তাকে এরকম কছু কথা বলেন। তাদের দেশ এখন বিদেশি শক্তির অধীন, ভারত মায়ের বীর সন্তানেরা দেশকে শৃংখল মুক্ত করার জন্য সংঘবদ্ধ হচ্ছে। শুরু হয়েছে স্বদেশী আন্দোলন। বহু বাঙালি যুবক এই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। এসব শুনতে শুনতে বালিকা পারুল রোমাঞ্চিত হয়। এখন ফের দাদাদের মুখে একই কথা শুনে তার স্মৃতিকে উসকে দেয়।
দাদাদের চা দেওয়া, বাসনপত্র গোছগাছের ফাঁকে এসব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে পারুল। সেদিন দাদাদের মধ্যে প্রীতিলতা নামে একজন মহিলাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। সে এই আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়েছে।
“তাহলে মেয়েরাও পারে!” পারুলের সারা শরীরে বিদ্যুত চমকের মত শিহরন খেলে গেল।
“প্রীতিলতা কে?” ব্যাকুল ভাবে প্রশ্ন করল পারুল।
“তুই এসব শুনিস নাকি?” পারুলের বড়দা বলল।
“ কেন, শুনলে কী হয়?”
“তোকে কাল থেকে আর চা দিতে আসতে হবে না। ঝিয়ের হাতে পাঠালেই হবে”। পারুলের দুই দাদাই ধমকের সুরে বলে উঠল।
“দূর! কেন ওকে বকা ঝকা করছিস? ছেলে মানুষ! তাছাড়া আমরা যে পরাধীন একটা দেশ বাস করি, দেশমাতৃকার লাঞ্ছনা, অপমানের কথা ছোট –বড় প্রত্যেকের জানা উচিত। যত দেরিতে জানবে দেশোদ্ধারের কাজে তত দেরি হবে। শোন বোন, প্রীতিলতা হল তোরই মত একজন মেয়ে। তবে সে তোর থেকে বয়সে অনেটাই বড় ও যথেষ্ট শিক্ষিত। সে দেশের কাজে নিজেকে সমর্পন করেছে। তার জন্য জীবন দিতেও সে রাজি”। পারুলকে বুঝিয়ে বলল বিকাশ।
“তার বাড়ির লোক তাকে আসতে দিয়েছে? আমি যদি অমন কাজ করব বলি আমাকে কী করতে দেবে”?
“দেখলি তো? এই ছোট্ট মাথায় কী সব ঢুকেছে?” পারুলের দুই দাদা বিরক্ত হয়ে বলল।
অমল পারুলকে কাছে বসিয়ে বলল “এসব কাজ যারা করে তাদের ভয় করলে চলে না। তাদের বেশিরভাগজন বাড়ির অমতেই করে। এখন তুই তো ছোট, আর একটু বড় হলে তুই নিজেই বুঝতে পারবি। আর একটা কথা, এখানে যে সমস্ত কথা আলোচনা হয়, সেগুলো কাকাবাবু, কাকিমাকে বলতে যাস না”।
মাথা নেড়ে সায় দিল পারুল। সে বুঝতে পারল- তার দুই দাদা,অমলদা, বিকাশ দার সাথে স্বদেশী আন্দোলনের যোগ আছে। তাদের জন্য গর্ব বোধ করল সে।
তাদের বৈঠকখানায় আর দাদাদের আড্ডা হয় না। কেন হয় না সেটা পারুলের জানার কথা নয়। পারুলের খুব ইচ্ছা করে দেশের খবর জানতে, কিন্তু দাদাদের জিজ্ঞেস করতে ভয় পায় । অমলদা, বিকাশদাও আর আসে না। ভিতর ভিতর ছট ফট করতে থাকে পারুল।
তেরো বছরের মেয়েকে তো আর ঘরে রাখা চলে না। পারুলের বিয়ে ঠিক হল- ‘পাঁচ বেড়িয়া’ গাঁয়ের জমিদার বিপ্রদাস বাবুর কলেজে পড়া ছেলের সঙ্গে। বিয়ের আর দু দিন বাকি। তার দাদার বন্ধুরা এসেছে। ছাদের ঘরে তাদের শোবার ব্যবস্থা হয়েছে। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে চুপি চুপি ছাদে গিয়ে দাঁড়াল পারুল। মনটা ভালো নেই। এমন জীবন সে চায়নি। কিন্তু তার কথা কে শুনবে। ছাদের ঘরে তার দাদারা তখনও জেগে আছে। কথা বার্তার আওয়াজ আসছে। পারুল ভেজানো দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সে যা আন্দাজ করেছে তাই। তারা স্বদেশী আন্দোলন নিয়ে কথা বলছে। টাকার অভাবে তাদের কাজ বন্ধ হবার জোগাড়। যে করেই হোক টাকা জোগাড় করতে হবে। ওরা রেল ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছে। এতে ধরা পড়ার ভয় আছে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যুও হতে পারে।
পরদিন খুব ভোরে পারুলের পেটে যন্ত্রণা শুরু হল। অমল ডাক্তারী ছাত্র। পারুলকে পরীক্ষা করে সে বলল , “তেমন কিছু বুঝছি না। বিয়ে নিয়ে মনের উপর চাপ পড়েছে। সেই থেকে হজমের সমস্যা। কিছু ওষুধ-পত্র দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবে।“
কিছুক্ষণ পর পারুল একজনকে দিয়ে অমলকে ডেকে পাঠালো, কোন ওষুধটা কখন খাবে গুলিয়ে ফেলেছে। অমল এসে বলল, “কীরে! এই বুদ্ধি নিয়ে তুই সংসার করবি? জমিদার বাড়ির বড় বৌ হতে চলেছিস?”
“ওসব কথা ছাড় অমলদা। আমি অন্য কারণে তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছি।”
“ অন্য কারণ! কী সেটা?”
“মুখে বলার অসুবিধে আছে। এটা পড়লেই বুঝতে পারবে”। বালিশের তলা থেকে একটা ভাঁজ করা চিঠি অমলের হাতে দিল পারুল।
চিঠিটা পড়ে হতবম্ব হয়ে গেল অমল।
“এসব কী লিখেছিস? জানা জানি হয়ে গেলে আমি কাকাবাবুর কাছে মুখ দেখাব কী করে?”
“সেটা তুমি ভাব। তবে আমি আমার সংকল্পে স্থির। এর অন্যথা হলে বিকল্প কী ভেবেছি সেটাও তো চিঠিতে লেখা আছে”।
“বিয়ে ঠিক হবার আগে এসব ভাবলি না কেন? “
“অনেক ভেবেছি । কোনো রাস্তা পাইনি। তুমি এখন যাও অমলদা। কেউ এসে পড়বে”। তুমি আমাকে সাহায্য না কর ক্ষতি নেই, তবে কথাটা কাউকে বোলো না।“
ভোর রাতে বিয়ের লগ্ন। সন্ধ্যে রাতে ফের পারুলের পেটে যন্ত্রণা শুরু হল।
“তুমি একবার দেখো বাবা, মেয়েটা বেশ চিন্তায় ফেলে দিল!” পারুলের মা অমলকে ডেকে বলল।
অমল পারুলের ঘরে ঢুকে দেখল, শাড়ি গয়নায় সেজে সে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। ঘরে প্রচুর লোকের ভিড়।
অমল ঘরে ঢুকে সবাইকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলল। একে একে সবাই চলে গেলে অমল বলল, “কী রে মাথা থেকে এখনো ভূত যায়নি?”
“এটা সাময়িক আবেগের ব্যাপার নয় অমলদা! এটা আমার সংকল্প! যাই হয়ে যাক এখান থেকে আমি এক চুল নড়ব না।”
“তুই আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলি! দেখছি কী করা যায়! তবে, গয়নাগুলো আমি নিতে পারব না”।
“কেন? তোমাদের টাকার খুব দরকার। আমি শুনেছি”।
“তবু পারব না। তোর দাদাদের কাছে ঠিক ধরা পড়ে যাব। ভাববে সবের মূলে আমি ছিলাম! দল ভেঙে যাবে।“
“তাহলে? এগুলো পুকুরের জলে ফেলে দিই গে?”
“না, এগুলো প্রফুল্লবাবুকে দিবি। যথা সময়ে ওগুলো আমরা পেয়ে যাব। এদিকে কেউ আসছে মনে হচ্ছে। এখন আমি যাচ্ছি”।
অমল পারুলের ঘর থেকে বেরিয়েই পারুলের মাকে দেখ্তে পেয়ে বলল,” কাকিমা, চিন্তার কিছু নেই। আমি ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। লগ্ন তো সেই ভোর রাতে। তার আগে পারুল কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিক। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। হ্যাঁ, ওর ঘরে এখন কেউ যেন না যায়, সেটা দেখবেন”।
সবাই বেরিয়ে যেতেই পারুল একে একে বেনারসী, গয়না খুলে ফেলে, পিসির একটা থান কাপড় পড়ে নিল। পিসি-ভাইঝি এক ঘরে শোয়। তাই সুনয়নীর সমস্ত কিছু এ ঘরেই থাকে। খুলে রাখা গয়নাগুলো পুঁটলি বেঁধে ঘড়ার ভিতর ভরে ঘড়াটি কোমরে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। কত লোক আসছে যাচ্ছে তার মধ্যে বিধবাবেশী পারুলকে কেউ খেয়াল করল না।
মাঝরাতে, বিধস্থ অবস্থায়, থান কাপড় পরা পারুলকে দেখে প্রফুল্ল মাষ্টার আঁতকে উঠলেন, “একী! পারুল তুমি? এখানে এই অবস্থায়! তোমার না আজ বিয়ে? আমিও তো তোমাদের বাড়ি যাব বলে তৈরি হচ্ছিলাম।”
পারুলের মুখে সমস্ত শুনে প্রফুল্ল মাষ্টারের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল। তিনি এখন কী করবেন?
“তুমি কোথায় যেতে চাও বল? আমি সেখানে তোমাকে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করব”। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে প্রফুল্ল মাষ্টার বললেন।
“মাস্টারমশাই, আমি আত্মহত্যা করতেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার ভিতর থেকে কেউ যেন বলে উঠল- প্রাণ যদি দিতেই হয় তবে পুকুরে জলে কেন? সেটা দেশমাতৃকার কল্যাণে উৎসর্গ কর! তখন সবার আগে আপনার কথা আমার মনে হল। আপনি আমাকে সঠিক যায়গায় পৌছে দিন মাষ্টারমশাই!“ এত কাণ্ডেও পারুলের চোখে জল আসেনি। এবার ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল পারুল।
প্রফুল্ল মাষ্টার পারুলকে নিয়ে মাতঙ্গিনী হাজরার কুটিরে যখন পৌঁছালেন তখন আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে। মহাত্মা গান্ধীর ভাব শিষ্যা মাতঙ্গিনী দেবী, যাকে এখন সবাই গান্ধী বুড়ী বলে, কিছুদিন আগে বহরমপুর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। গত কাল অবধি তিনি তমলুকের বন্যা কবলিত গ্রামগুলোর মানুষ জনের পাশে ছিলেন। আজ শেষ রাতে ফিরেছেন। বিশ্রাম কাকে বলে তার জানা নেই। ফিরেই কাজে লেগে পড়েছেন। চরকা কাটতে কাটতে বিভোর হয়ে ভজন গাইছেন- “রঘু পতি রাঘব রাজা রাম -- -- ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম——“।
“তোমার সাথে এ কে প্রফুল্ল?” প্রফুল্ল মাষ্টারের সাথে একজন বিধবা কিশোরীকে দেখে ভজন থামিয়ে মাতঙ্গিনী দেবী বললেন।
“আমার এক ছাত্রী। দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করতে চায়। একে আপনি নিজের কাছে রেখে গড়ে পিঠে নিন”।
“হুজুগে পড়ে আসেনি তো? এ পথ তো বড় কঠিন! তুমি ওকে সব জানিয়েছ তো?”
“ও সমস্ত জেনেই এসেছে।“
“চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তুমি বড়লোকের মেয়ে। পারবে কষ্টের জীবন মেনে নিতে?”
“আপনি আদেশ করলে আমার প্রাণটাও দিতে পারি”।
“সে আদেশ দেবার আমি কে? আমি সামান্য মেয়ে মানুষ। তবে প্রাণ দেওয়াটাই বড় কথা নয়। সেটা তো একবারের বেশি খরচ করা যায় না। আগে নিজেকে প্রস্তুত কর। উপযুক্ত সময় এলে তখন ভেবো।“
“প্রফুল্ল, মেয়েটির ভার আমি নিলাম।“
“নাও গো মেয়ে, এটা ধর। এটা দিয়েই হোক তোমার দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার প্রথম পাঠ। প্রফুল্ল চলে গেলে একটা চরকা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন মাতঙ্গিনী দেবী।
পারুল মাতঙ্গিনী দেবীকে প্রণাম করে চরকাটি টেনে নিল। মুহূর্তের মধ্যে তার মনের সমস্ত গ্লানি, হীনমন্যতা, দূর হয়ে এক গভীর প্রশান্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল চোখ-মুখ। এতদিন পর বেঁচে থাকার একটা অর্থ খুঁজে পেয়েছে সে। আজ সেও একজন দেশ গড়ার কারিগর।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
ছবি : সৌজন্য ইন্টারনেট
0 Comments
Post Comment